মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার ৩নং দেউলবাড়ী-দোবড়া ইউনিয়নের পদ্মডুবি এলাকায় বিধি লঙ্ঘন করে ডিপিপি’র আওতায় পদ্মডুবি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় নামে নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পার্শ্ববর্তি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অভিযোগ, বিধি লঙ্ঘন করে প্রস্তাবিত বিদ্যালয়টি স্থাপিত হলে অত্র ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়গুলো হুমকির মুখে পড়বে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং প্রবিধিমালা অনুসারে বিধি বহির্ভূত কোন বেসরকারী বিদ্যালয় স্থাপনের সুযোগ নেই। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় অত্র ইউনিয়নের একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়। নতুন প্রস্তাবিত বিদ্যালয়টি মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে অনধিক ১কি.মি. দূরত্বে স্থাপনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। অত্র ইউনিয়নে ৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩টি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। যার মধ্যে মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আশেপাশে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৪টি বিদ্যালয় রয়েছে। ২০১৩ সালে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন সাপেক্ষে এই ইউনিয়নের ৪টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ৯ম শ্রেণি খোলার অনুমতি দেন। এছাড়া ও ফিমেল সেকেন্ডারী এ্যাসেসমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। ২০২০ সালে অত্র বিদ্যালয় হতে মাত্র ২জন শিক্ষার্থী এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে ১জন পাস করে। ফলে বিদ্যালয়টি মাধ্যমিকের অনুমতি পেয়েও বর্তমানে নিম্ন মাধ্যমিক হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। অত্র ইউনিয়নে জনসংখ্যা ও আয়তনের তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এ ধরনের সংকটাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, অত্র ইউনিয়নের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী সংকটের মধ্যে দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় বিধিবহির্ভূত নতুন বিদ্যালয় স্থাপিত হলে এখানকার অন্যান্য বিদ্যালয়গুলো কোন না কোন সময় এমপিও বাতিলের পর্যায়ে পতিত হবে। মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও জমিদাতা মো. কামরুজ্জামান বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে। বিদ্যালয়ের অদূরে বিধি বহির্ভূত আরেকটি নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে অত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী সংকটের সম্মুখিন হবে। দেউলবাড়ী-দোবড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. বাবুল আকন বলেন, মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এলাকাবাসীর অনেক পরিশ্রমের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রস্তাবিত বিদ্যালয়টি এই বিদ্যালয় হতে অনধিক ১কি.মি দূরে। সরকারী বিধান লঙ্ঘন করে নতুন বিদ্যালয় স্থাপিত হলে এলাকাবাসীর পরিশ্রমের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই মনোহরপুর বিদ্যালয়টি ধ্বংস হয়ে যাবে। দেউলবাড়ী-দোবড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক আরেক ইউপি সদস্য এবং মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র সমীরণ সমদ্দার বলেন, এই এলাকার মুরব্বীরা অনেক পরিশ্রম করে এই বিদ্যালয় দাড় করিয়েছেন। যদি নিকটেই আরেকটি নতুন বিদ্যালয় স্থাপিত হয় তাহলে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মো. মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, প্রস্তাবিত বিদ্যালয়টি এই বিদ্যালয় হতে অনধিক ১কি.মি দূরে অবস্থিত।
এলাকাবাসীর দাবি ডিপিপি’র আওতায় নতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শণ করে বিধি মোতাবেক দূরত্ব ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে স্থাপনের অনুমতি দিলে উভয় বিদ্যালয় কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে পরিচালিত হতে পারবে।
এ বিষয়ে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আমি অভিযোগপত্র পেয়েছি এবং বিষয়টি পরিদর্শনের জন্য অত্র বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শককে চিঠি দেয়া হয়েছে।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মো. আব্বাস উদ্দিন খান প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং প্রবিধিমালা-২০০৯ এর আলোকে একটি ক্লাস্টার এলাকায় কমপক্ষে ১০হাজার জনসংখ্যা থাকতে হবে এবং প্রস্তাবিত বিদ্যালয় থেকে ৪কি.মি. এর মধ্যে কোন বিদ্যালয় থাকতে পারবে না মর্মে শর্ত দেয়া রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বিদ্যালয় সরেজমিনে পরিদর্শন করে বৈধতার সনদপত্র দিবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা।
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র পেয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দু’টি বিদ্যালয় পাশাপাশি অবস্থানের বিষয়ে নির্দিষ্ট পরিপত্র ও নির্দেশনা রয়েছে। শর্ত পূরণ না করে একটি বিদ্যালয়ের পাশে নতুন আর একটি বিদ্যালয় স্থাপনের কোন সুযোগ নেই।
নাজিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহিদুল ইসলাম বলেন, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে উক্ত প্রস্তাবিত বিদ্যালয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে। অত্র এলাকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দাবি, যেহেতু ৩নং দেউলবাড়ী-দোবড়া ইউনিয়নে আয়তন ও জনসংখ্যার তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেক বেশি সেহেতু বিধি বহির্ভূত নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি না দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পুরাতন বিদ্যালয়গুলোকে ধ্বংস ও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সদয় হবেন।